পলিসিস্টিক ওভারী সিনড্রোম

পলিসিস্টিক ওভারী সিনড্রোমঃ
পলিসিস্টিক ওভারী সিনড্রোম বা পিসিওএস মেয়েদের প্রজননক্ষম সময়ের সবচেয়ে কমন হরমোনজনিত রোগ। কিশোরী বয়স থেকে শুরু করে যে কোনো বয়সেই এ রোগটি হতে পারে। বন্ধ্যাত্ব রোগীদের একটি বড় অংশ (শতকরা ৩০-৪০ভাগ) পিসিওএস রোগে ভুগে থাকে।
এ রোগের কারণ কি?
এটি কি জেনেটিক বা বংশগত রোগ?
অনেক রোগী প্রশ্ন করেন, “আমার মায়ের বা আমার বোনের পিসিওএস আছে, তাহলে আমারও কি পিসিওএস হতে পারে?”
আবার অনেকে প্রশ্ন করেন, আমার পরিবারে কারো পিসিওএস নেই, এমন কি আমার বংশেও কারো নেই। তাহলে আমার কেনো পিসিওএস হলো?
এরোগের কারণ অনুসন্ধানের জন্য এ পর্যন্ত অসংখ্য গবেষণা হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে এটি প্রমানিত হয়েছে যে, এটি একটি মালিটিফ্যাক্টোরিয়াল ডিজিজ বা পলিজেনিক ডিসঅর্ডার। জেনেটিক, এপিজেনেটিক, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, মেটাবলিক ডিরেন্জমেন্ট, পরিবেশগত কিছু বিষয় যেমন অত্যধিক ওজন বা স্থুলতা এবং মানসিক চাপ-এসব কিছুই পিসিওএস রোগের কারণ।
পলিসিস্টিক ওভারী সিনড্রোম রোগটি সাধারণত অটোজোমাল ডমিন্যান্ট ফ্যাশনে বংশপরম্পরায় ট্রানসমিশন হয়ে থাকে। অর্থাৎ মায়ের পিসিওএস থাকলে তার মেয়েদের মধ্যেও পিসিওএস হবার সম্ভাবনা শতকরা ৫০ ভাগ।
মেয়েদের স্টেরয়েড হরমোন ও ফলিকুলোজেনেসিস বা ডিম্বানু বড় হওয়া বা পরিপক্ক হবার জন্য যে জীনগুলো দায়ী সেসব জীনের মিউটেশন হলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং ফলিকল বা ডিম্বানু ম্যাচিউর হতে পারে না। ফলে ওভুলেশন হয় না এবং মাসিকও অনিয়মিত হয়ে পরে।
সম্প্রতি, গবেষণায় দেখা গেছে যে, এপিজেনেটিক বা জীনের ফাংশনাল চেন্জ বা কার্যকারিতার কোনো পরিবর্তন হলেও পিসিওএস হতে পারে।
এছাড়া পিটুইটারী গোনাডোট্রপিন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ও মেয়েদের শরীরে এন্ড্রোজেন বা পুরুষ হরমোনের আধিক্য হওয়া এ রোগের অন্যতম কারণ।
পিসিওএস এর আরেকটি বড় কারণ হলো ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স অর্থাৎ ইনসুলিন হরমোন কাজ করতে না পারা। ইনসুলিন রিসেপ্টর জীনের মিউটেশনের কারনে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ডেভেলপ করতে পারে। এর ফলে হাইপার-ইনসুলিনেমিয়া, এন্ড্রোজেন হরমোন বেড়ে যাওয়া এবং ডায়াবেটিস বা মেটাবলিক সিনড্রোম ডেভেলপ করে।
ইদানিং দেখা যাচ্ছে যে, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ওজন (ওভারওয়েট) বা স্থুলতা (ওবেসিটি) এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ – এগুলোও পিসিওএস এবং এর জটিলতার জন্য দায়ী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *